March 10, 2025
দলিলের নকল তোলার নিয়মাবলী ও খরচ ২০২৫

দলিলের নকল তোলার নিয়মাবলী ও খরচ ২০২৫

দলিলের নকল (Certified Copy) উত্তোলনের নিয়মাবলী, খরচ ২০২৫ সহ জানুন! সার্টিফাইড কপি, আবেদন ফরম ও নকল দলিল চেনার উপায়। ক্লিক করুন!

আজকাল জমি-জমা সংক্রান্ত কাগজপত্র, বিশেষ করে দলিলের প্রয়োজন যেন লেগেই থাকে। হয়তো জমি বিক্রি করবেন, কিংবা ব্যাংকে লোন নেবেন, অথবা অন্য কোনো আইনি কাজে লাগছে – এমন পরিস্থিতিতে দলিলের আসল কপিটি সব সময় হাতের কাছে নাও থাকতে পারে। চিন্তা নেই, আপনার প্রয়োজন মেটাতে রয়েছে দলিলের নকল বা সার্টিফাইড কপি উত্তোলনের সুযোগ।

কিন্তু দলিলের নকল (Certified Copy) উত্তোলনের নিয়মাবলী সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই স্পষ্ট ধারণা নেই। কোথায় গেলে এই নকল কপি পাওয়া যাবে, কী কী কাগজ লাগবে, খরচ কেমন হবে – এই সব প্রশ্নের উত্তর এক জায়গায় পাওয়া গেলে বেশ সুবিধা হয়, তাই না? আজকের ব্লগ পোস্টে আমরা এই বিষয়গুলো নিয়েই বিস্তারিত আলোচনা করব। তাহলে চলুন, জেনে নেওয়া যাক দলিলের নকল তোলার খুঁটিনাটি।

দলিলের নকল বা সার্টিফাইড কপি কী এবং কেন প্রয়োজন?

সহজ ভাষায় বলতে গেলে, দলিলের নকল বা সার্টিফাইড কপি হল আপনার মূল দলিলের একটি অফিসিয়ালি সত্যায়িত প্রতিলিপি। এটি দেখতে হুবহু আপনার আসল দলিলের মতো, এবং সরকারিrecords-এ থাকা আপনার দলিলের তথ্যের সঠিক பிரதிবেদন করে।

এখন প্রশ্ন হল, এই সার্টিফাইড কপির দরকার কেন? নানা কারণে এর প্রয়োজন হতে পারে:

  • আসল দলিল হারিয়ে গেলে বা নষ্ট হয়ে গেলে আইনি কাজে ব্যবহারের জন্য।
  • আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে, যেমন লোন বা বন্ধকের জন্য।
  • জমির মালিকানা প্রমাণ করার জন্য।
  • আদালতের কাজে ব্যবহারের জন্য।
  • অন্য কোনো সরকারি বা বেসরকারি দপ্তরে জমা দেওয়ার জন্য।

মোটকথা, আপনার আসল দলিলটি কোনো কারণে ব্যবহার করা সম্ভব না হলে, সার্টিফাইড কপি একটি বিকল্প হিসেবে কাজ করে।

দলিলের সার্টিফাইড কপি তোলার নিয়মাবলী

দলিলের সার্টিফাইড কপি তোলা কিন্তু খুব কঠিন কিছু নয়। কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করলেই আপনি সহজেই আপনার দলিলের নকল হাতে পেতে পারেন। নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

১. আবেদন করার নিয়ম

দলিলের নকল তোলার জন্য আপনাকে প্রথমে একটি নির্দিষ্ট ফরমে আবেদন করতে হবে। এই আবেদন ফরমটি আপনি কোথায় পাবেন, তা নিয়ে ভাবছেন? চিন্তা নেই, সেটিও বলছি।


  • আবেদন ফরম কোথায় পাবেন: সাধারণত, এই ফরম সংশ্লিষ্ট জেলার রেজিস্ট্রি অফিস অথবা ভূমি অফিসে পাওয়া যায়। অনেক সময় অনলাইনেও এটি পাওয়া যেতে পারে। আপনি যে অফিস থেকে দলিলের সার্টিফাইড কপি নিতে চান, সেখানে খোঁজ নিলেই ফরমটি পেয়ে যাবেন। এছাড়াও, অনেক ওয়েবসাইটে এই ফরম ডাউনলোড করার অপশনও থাকে।



  • আবেদন ফরম পূরণ করার নিয়ম: ফরমটি হাতে পাওয়ার পর সেটি নির্ভুলভাবে পূরণ করতে হবে। আপনার দলিলের নম্বর, জমির মালিকের নাম, ঠিকানা এবং অন্যান্য তথ্য সঠিকভাবে লিখতে হবে। কোনো ভুল তথ্য দিলে কিন্তু আপনার আবেদন বাতিল হয়ে যেতে পারে।


২. প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

আবেদন করার সময় কিছু কাগজপত্র জমা দিতে হয়। এই কাগজগুলো আপনার পরিচয় এবং দলিলের সত্যতা প্রমাণ করে। নিচে কাগজপত্রগুলোর একটি তালিকা দেওয়া হলো:

  • আবেদনকারীর পরিচয়পত্র (যেমন: ভোটার আইডি কার্ড, পাসপোর্ট, ইত্যাদি)।
  • দলিলের একটি ফটোকপি (যদি থাকে)।
  • জমির মালিকানার প্রমাণপত্র (যেমন: খাজনার রশিদ)।
  • আবেদনকারীর পাসপোর্ট সাইজের ছবি।

উপরে দেওয়া কাগজগুলোর পাশাপাশি, আপনার ক্ষেত্রে যদি অন্য কোনো অতিরিক্ত কাগজপত্রের প্রয়োজন হয়, তবে সংশ্লিষ্ট অফিস থেকে জেনে নিতে পারেন।

৩. কোথায় আবেদন করবেন?

দলিলের নকল তোলার জন্য আপনাকে সঠিক অফিসে আবেদন করতে হবে। সাধারণত, এই আবেদন সংশ্লিষ্ট জেলার রেজিস্ট্রি অফিসে করতে হয়। তবে, কিছু ক্ষেত্রে ভূমি অফিসেও আবেদন করা যেতে পারে।


  • রেজিস্ট্রি অফিস: যেখানে আপনার মূল দলিলটি রেজিস্ট্রি করা হয়েছিল, সেই রেজিস্ট্রি অফিসেই সাধারণত নকলের জন্য আবেদন করতে হয়।



  • ভূমি অফিস: কোনো কোনো ক্ষেত্রে, আপনার এলাকার ভূমি অফিসেও এই আবেদন করা যেতে পারে। তবে, এটি নির্ভর করে সেখানকার নিয়মাবলীর উপর।


আবেদন করার আগে অবশ্যই জেনে নিন, আপনার ক্ষেত্রে কোন অফিসে আবেদন করতে হবে।

৪. সরকারি ফি ও খরচ

দলিলের নকল তুলতে হলে আপনাকে নির্দিষ্ট পরিমাণ সরকারি ফি জমা দিতে হবে। এই ফি বিভিন্ন সময়ে পরিবর্তিত হতে পারে। তাই, আবেদন করার আগে রেজিস্ট্রি অফিস থেকে জেনে নেওয়া ভালো যে বর্তমানে কত ফি দিতে হবে।

দলিলের নকল তোলার খরচ ২০২৫ :

২০২৫ সালে দলিলের নকল তোলার খরচ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য পেতে, আপনাকে সংশ্লিষ্ট রেজিস্ট্রি অফিস অথবা ভূমি অফিসের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। কারণ, এই ফি সরকারি নিয়ম অনুযায়ী সময়ে সময়ে পরিবর্তিত হয়। তবে, সাধারণভাবে কিছু অতিরিক্ত খরচও হতে পারে, যেমন:

  • আবেদন ফরমের মূল্য।
  • নোটরী পাবলিকের খরচ (যদি লাগে)।
  • অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ।

সব মিলিয়ে, দলিলের নকল তুলতে কত খরচ হবে, তা আগে থেকে জেনে নিলে আপনার সুবিধা হবে।

৫. নকল দলিল পাওয়ার নিয়ম

আবেদন করার পরে, আপনাকে কিছুদিন অপেক্ষা করতে হতে পারে। কারণ, আপনার আবেদনটি যাচাই-বাছাই করে নকল দলিল তৈরি করতে কিছু সময় লাগে।


  • কতদিন লাগতে পারে: সাধারণত, ৭ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে আপনি আপনার দলিলের নকল হাতে পেয়ে যাবেন। তবে, এটি অফিসের কাজের চাপ এবং অন্যান্য পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে।



  • কীভাবে সংগ্রহ করবেন: যখন আপনার নকল দলিল তৈরি হয়ে যাবে, তখন আপনাকে অফিস থেকে জানানো হবে। আপনি অফিসে গিয়ে আপনার পরিচয়পত্র দেখিয়ে সেটি সংগ্রহ করতে পারবেন।


৬. খতিয়ানের সার্টিফাইড কপি

দলিলের পাশাপাশি, খতিয়ানের সার্টিফাইড কপিরও প্রয়োজন হতে পারে। খতিয়ান হল জমির মালিকানার একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল। এটিও আপনি ভূমি অফিস থেকে তুলতে পারবেন।

খতিয়ানের সার্টিফাইড কপি তোলার নিয়ম:

খতিয়ানের সার্টিফাইড কপি তোলার নিয়ম দলিলের মতোই। আপনাকে প্রথমে একটি আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে এবং নির্দিষ্ট ফি পরিশোধ করতে হবে। তারপর, ভূমি অফিস আপনার আবেদন যাচাই করে খতিয়ানের সার্টিফাইড কপি প্রদান করবে।

খতিয়ানের সার্টিফাইড কপি কোথায় পাওয়া যায়:

খতিয়ানের সার্টিফাইড কপি আপনি আপনার এলাকার ভূমি অফিস অথবা উপজেলা ভূমি অফিস থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন। বর্তমানে, কিছু জেলায় অনলাইনেও খতিয়ানের জন্য আবেদন করা যায়।

নকল দলিল চেনার উপায়

নকল দলিল চেনাটা খুবই জরুরি। কারণ, জাল দলিল দিয়ে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিছু সাধারণ বিষয় লক্ষ্য রাখলে আপনি নকল দলিল শনাক্ত করতে পারবেন।

  • কাগজের মান: আসল দলিলের কাগজ সবসময় ভালো মানের হয়। নকল দলিলের কাগজ তুলনামূলকভাবে খারাপ হতে পারে।
  • সিল ও স্বাক্ষর: দলিলের সিল ও স্বাক্ষরগুলো ভালোভাবে লক্ষ্য করুন। এগুলো যেন অস্পষ্ট বা ঘষা না থাকে। কোনো সন্দেহ হলে রেজিস্ট্রি অফিস থেকে যাচাই করে নিতে পারেন।
  • লেখার ধরণ: দলিলের লেখাগুলো সাধারণত হাতে লেখা হয় অথবা টাইপ করা হয়। লেখার ধরণে কোনো অসঙ্গতি দেখলে সতর্ক থাকুন।
  • রেজিস্ট্রেশন নম্বর: দলিলের রেজিস্ট্রেশন নম্বরটি রেজিস্ট্রি অফিসে যাচাই করে দেখুন।

যদি আপনার কোনো দলিল নিয়ে সন্দেহ হয়, তবে দ্রুত রেজিস্ট্রি অফিসের সাথে যোগাযোগ করুন।

মূল দলিল উত্তোলন

অনেক সময় আমাদের মূল দলিলের প্রয়োজন পরে। কিন্তু মূল দলিল হারিয়ে গেলে বা নষ্ট হয়ে গেলে কী করবেন? এক্ষেত্রে, আপনি রেজিস্ট্রি অফিস থেকে একটি ডুপ্লিকেট দলিল তুলতে পারবেন।

  • ডুপ্লিকেট দলিল তোলার জন্য আপনাকে প্রথমে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে হবে।
  • তারপর, জিডির কপি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ রেজিস্ট্রি অফিসে আবেদন করতে হবে।
  • আবেদন করার পর, অফিস আপনার আবেদন যাচাই করে ডুপ্লিকেট দলিল প্রদান করবে।

মনে রাখবেন, ডুপ্লিকেট দলিল পেতে কিছুটা সময় লাগতে পারে এবং এর জন্য কিছু অতিরিক্ত ফি পরিশোধ করতে হয়।

দলিলের নকল আবেদন ফরম

দলিলের নকলের জন্য আবেদনের একটি নমুনা নিচে দেওয়া হলো। এই ফরমটি সংশ্লিষ্ট অফিস থেকে সংগ্রহ করে পূরণ করতে হবে।

ক্রমিকবিবরণ
আবেদনকারীর নাম:
পিতার নাম:
মাতার নাম:
বর্তমান ঠিকানা:
স্থায়ী ঠিকানা:
দলিলের নম্বর:
দলিলের তারিখ:
জমির পরিমাণ:
জমির ধরণ:
১০প্রয়োজনীয় কাগজের তালিকা:
১১ফি পরিশোধের রশিদ নম্বর ও তারিখ:
১২আবেদনকারীর স্বাক্ষর ও তারিখ:

এই ফরমটি পূরণ করে উপরে উল্লিখিত কাগজপত্রসহ নির্দিষ্ট অফিসে জমা দিতে হবে।

দলিলের সার্টিফাইড কপি কি

দলিলের সার্টিফাইড কপি হলো আপনার আসল দলিলের একটি সত্যায়িত অনুলিপি। এটি মূল দলিলের মতোই আইনগতভাবে বৈধ এবং ব্যবহারযোগ্য। কোনো কারণে আসল দলিল হারিয়ে গেলে বা নষ্ট হয়ে গেলে, সার্টিফাইড কপি ব্যবহার করে আইনি কাজ সম্পন্ন করা যায়।

কিছু জরুরি টিপস

  • দলিলের নকল তোলার আগে, সংশ্লিষ্ট অফিসের নিয়মাবলী সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিন।
  • আবেদন করার সময় সকল কাগজপত্র সঠিকভাবে জমা দিন।
  • ফি পরিশোধের রশিদটি নিরাপদে রাখুন।
  • নকল দলিল হাতে পাওয়ার পর, সেটি ভালোভাবে যাচাই করে নিন।

আশা করি, দলিলের নকল (Certified Copy) উত্তোলনের নিয়মাবলী সম্পর্কে আপনার একটি স্পষ্ট ধারণা হয়েছে। জমি-জমা সংক্রান্ত যেকোনো বিষয়ে সচেতন থাকা জরুরি। এই তথ্যগুলো আপনার জন্য সহায়ক হবে।

জমির দলিল একটি মূল্যবান সম্পদ। এর সুরক্ষা নিশ্চিত করা আপনার দায়িত্ব। সরকারি নিয়মকানুন মেনে চলুন এবং নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন থাকুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *