![[ভূমি জরিপ এবং বিভিন্ন ধরনের খতিয়ান] 2025](https://ekhatian.online/wp-content/uploads/2025/02/bhumi-jorip-o-bibidho-khatian.png)
[ভূমি জরিপ এবং বিভিন্ন ধরনের খতিয়ান] 2025
আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন আপনি? জমি-জমা নিয়ে আমাদের দেশে আগ্রহের শেষ নেই। বাপ-দাদার সম্পত্তি থেকে শুরু করে নিজের কেনা জমি, সবকিছুর হিসাব রাখতে হয়। আর এই হিসাব রাখার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় হলো ভূমি জরিপ এবং খতিয়ান। এই দুটো জিনিস ঠিকঠাক না থাকলে কিন্তু পরবর্তীতে ঝামেলা হতে পারে। তাহলে চলুন, আজকের ব্লগ পোস্টে আমরা ভূমি জরিপ এবং বিভিন্ন ধরনের খতিয়ান সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।
ভূমি জরিপ কি এবং কেন প্রয়োজন?
ভূমি জরিপ মানে হলো জমির পরিমাপ করা এবং এর সীমানা নির্ধারণ করা। শুধু পরিমাপ করাই নয়, জমির মালিক কে, তার হিস্যা কতটুকু, এসবও জরিপের মাধ্যমে জানা যায়। একটা সময় ছিল, যখন জরিপ বলতে লাঠি দিয়ে মেপে জমির সীমানা ঠিক করা হতো। এখন আধুনিক টেকনোলজি ব্যবহার করে ড্রোন ও স্যাটেলাইটের মাধ্যমেও জরিপ করা হয়।
ভূমি জরিপের প্রয়োজনীয়তা
আচ্ছা, ভাবুন তো, আপনার দাদার একটি জমি ছিল, যার কোনো সঠিক মাপ নেই। এখন আপনার বাবা এবং চাচারা সেই জমি ভাগ করতে চান। যদি সঠিক জরিপ না থাকে, তাহলে কি ঝামেলা হবে না? অবশ্যই হবে! তাই ভূমি জরিপের প্রয়োজনীয়তা অনেক। নিচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ উল্লেখ করা হলো:
- জমির মালিকানা নির্ধারণ: জমির মালিক কে, সেটা সঠিকভাবে জানার জন্য জরিপ খুব দরকারি।
- সীমানা বিরোধ নিষ্পত্তি: দুই প্রতিবেশীর মধ্যে জমির সীমানা নিয়ে ঝগড়া প্রায়ই দেখা যায়। জরিপ করা থাকলে এই ধরনের ঝামেলা এড়ানো যায়।
- জমির সঠিক পরিমাপ: জমির পরিমাণ কত, সেটা সঠিকভাবে জানার জন্য জরিপ প্রয়োজন।
- সরকারি কাজে ব্যবহার: সরকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের জন্য জমি অধিগ্রহণ করে। এই জন্য জমির সঠিক মাপ ও মালিকানা জানা দরকার, যা জরিপের মাধ্যমে পাওয়া যায়।
বিভিন্ন ধরনের খতিয়ান
খতিয়ান হলো জমির মালিকানার দলিল। এটি একটি সরকারি নথি, যেখানে জমির মালিকের নাম, ঠিকানা, জমির পরিমাণ এবং অন্যান্য বিবরণ উল্লেখ থাকে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের খতিয়ান তৈরি করা হয়েছে। এদের মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য খতিয়ান নিয়ে আলোচনা করা হলো:
সি.এস. খতিয়ান (C.S. Khatian)
সি.এস. খতিয়ান হলো প্রথম ভূমি জরিপ, যা ব্রিটিশ সরকার ১৯৪০ সালে শুরু করেছিল। এই জরিপের মাধ্যমে প্রতিটি জমির মালিকের নাম এবং জমির বিবরণ নথিভুক্ত করা হয়। সি.এস. খতিয়ান জমির মালিকানার প্রাথমিক দলিল হিসেবে ধরা হয়।
এস.এ. খতিয়ান (S.A. Khatian)
১৯৫০ সালের জমিদারি অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন পাসের পর সরকার নতুন করে জমি জরিপ করে যে খতিয়ান তৈরি করে, তা এস.এ. খতিয়ান নামে পরিচিত। এই খতিয়ানে জমিদারদের থেকে কেড়ে নেওয়া জমিগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং প্রকৃত মালিকদের নাম নথিভুক্ত করা হয়। এস এ খতিয়ান অনলাইনে দেখার নিয়ম এখন অনেক সহজ হয়ে গেছে।
আর.এস. খতিয়ান (R.S. Khatian)
আর.এস. খতিয়ান হলো রিভিশনাল সার্ভে (Revisional Survey)। এই খতিয়ান সি.এস. এবং এস.এ. খতিয়ানের ভুলত্রুটি সংশোধন করে তৈরি করা হয়। এটি সাধারণত সি.এস. খতিয়ানের অনেক বছর পর করা হয়, তাই জমির মালিকানা এবং সীমানা পরিবর্তণগুলো এই খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
বি.এস. খতিয়ান (B.S. Khatian)
বি.এস. খতিয়ান বাংলাদেশ সরকারের সর্বশেষ জরিপ। এটি বাংলাদেশ সার্ভে নামেও পরিচিত। এই খতিয়ানে জমির আধুনিক তথ্য এবং মালিকানার বিবরণ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে জমি সংক্রান্ত যেকোনো কাজে বি.এস. খতিয়ান সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়।
দিয়ারা খতিয়ান (Diara Khatian)
নদী বা অন্য কোনো কারণে যদি কোনো জমি নতুন করে জেগে ওঠে, তাহলে সেই জমিকে দিয়ারা বলা হয়। এই দিয়ারা জমি নিয়ে যে খতিয়ান তৈরি করা হয়, তাকে দিয়ারা খতিয়ান বলে।
খতিয়ান বের করার নিয়ম ২০২৫
খতিয়ান বের করার নিয়ম এখন আগের থেকে অনেক সহজ হয়ে গেছে। আপনি চাইলে অনলাইনে অথবা ভূমি অফিসে গিয়ে খতিয়ান সংগ্রহ করতে পারেন। নিচে দুটি উপায় আলোচনা করা হলো:
অনলাইনে খতিয়ান পাওয়ার নিয়ম
অনলাইনে খতিয়ান পাওয়ার জন্য আপনাকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে যেতে হবে। বর্তমানে E registration bd এবং E registration land gov bd এইসব ওয়েবসাইটে খতিয়ান সংক্রান্ত অনেক তথ্য পাওয়া যায়। নিচে অনলাইন থেকে খতিয়ান বের করার নিয়ম দেওয়া হলো:
- প্রথমে ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে যান।
- “ই-নামজারি” অথবা “খতিয়ান অনুসন্ধান” অপশনে ক্লিক করুন।
- আপনার বিভাগ, জেলা, এবং উপজেলা নির্বাচন করুন।
- আপনার খতিয়ানের ধরন (সি.এস., এস.এ., আর.এস., বি.এস.) নির্বাচন করুন।
- দাগ নম্বর বা মালিকের নাম দিয়ে খতিয়ান অনুসন্ধান করুন।
- প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে আবেদন করুন এবং ফি পরিশোধ করুন।
- অনলাইনে খতিয়ানের সার্টিফায়েড কপি ডাউনলোড করুন।
E registration wb bangladesh – এও আপনি পশ্চিমবঙ্গ (যদি আপনি সেখানে বসবাস করেন) এর খতিয়ান সংক্রান্ত তথ্য পেতে পারেন।
ভূমি অফিস থেকে খতিয়ান পাওয়ার নিয়ম
যদি আপনি অনলাইনে খতিয়ান বের করতে না পারেন, তাহলে ভূমি অফিসে গিয়েও আবেদন করতে পারেন।
- আপনার এলাকার ভূমি অফিসে যান।
- খতিয়ানের জন্য একটি নির্ধারিত ফর্মে আবেদন করুন।
- প্রয়োজনীয় ফি জমা দিন।
- আবেদনপত্র জমা দেওয়ার পর আপনাকে একটি রিসিট দেওয়া হবে।
- রিসিটে উল্লেখ করা তারিখে ভূমি অফিস থেকে খতিয়ান সংগ্রহ করুন।
দাগ ও খতিয়ান নং চেক করার নিয়ম
জমির দাগ ও খতিয়ান নং চেক করা খুব জরুরি। এই দুটি জিনিস জানা থাকলে আপনি সহজেই জমির মালিকানা এবং অন্যান্য তথ্য যাচাই করতে পারবেন। দাগ ও খতিয়ান নং চেক করার নিয়ম নিচে দেওয়া হলো:
- অনলাইনে ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে যান।
- “দাগ ও খতিয়ান তথ্য” অপশনে ক্লিক করুন।
- আপনার বিভাগ, জেলা, এবং উপজেলা নির্বাচন করুন।
- মৌজা নির্বাচন করুন।
- দাগ নম্বর এবং খতিয়ান নম্বর দিয়ে অনুসন্ধান করুন।
- জমির মালিকের নাম এবং অন্যান্য তথ্য দেখতে পারবেন।
“ই-নামজারি” (E- নামজারি) কি?
ই-নামজারি হলো অনলাইনে জমির মালিকানা পরিবর্তনের প্রক্রিয়া। আগে নামজারি করার জন্য ভূমি অফিসে গিয়ে অনেক ঝামেলা পোহাতে হতো, কিন্তু এখন ই-নামজারির মাধ্যমে ঘরে বসেই এই কাজ করা যায়।
ই-নামজারির সুবিধা
- সহজ প্রক্রিয়া: অনলাইনে আবেদন করার কারণে প্রক্রিয়াটি অনেক সহজ হয়েছে।
- সময় সাশ্রয়: ভূমি অফিসে গিয়ে লাইনে দাঁড়ানোর ঝামেলা নেই, তাই সময় বাঁচে।
- খরচ কম: যাতায়াত খরচ এবং অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় খরচ কমে যায়।
- ট্র্যাকিং সুবিধা: আবেদনের বর্তমান অবস্থা অনলাইনে জানা যায়।
- দুর্নীতি হ্রাস: সরাসরি অনলাইনে আবেদন করার কারণে দুর্নীতি কমে যায়।
ই-নামজারির জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
ই-নামজারির জন্য কিছু কাগজপত্র প্রয়োজন হয়। নিচে একটি তালিকা দেওয়া হলো:
- জমির মূল দলিল
- খতিয়ানের সার্টিফায়েড কপি
- পর্চা
- ওয়ারিশ সনদ (যদি উত্তরাধিকার সূত্রে জমি পেয়ে থাকেন)
- জাতীয় পরিচয়পত্র
- মোবাইল নম্বর
- পাসপোর্ট সাইজের ছবি
এস এ খতিয়ান অনলাইনে দেখার নিয়ম
এস এ খতিয়ান অনলাইনে দেখা এখন খুব সহজ। আপনি ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে সহজেই এস এ খতিয়ান দেখতে পারেন। নিচে প্রক্রিয়াটি উল্লেখ করা হলো:
- প্রথমে ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে যান।
- “খতিয়ান অনুসন্ধান” অপশনে ক্লিক করুন।
- আপনার বিভাগ, জেলা, এবং উপজেলা নির্বাচন করুন।
- “এস এ খতিয়ান” অপশনটি নির্বাচন করুন।
- দাগ নম্বর বা মালিকের নাম দিয়ে অনুসন্ধান করুন।
- প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে আবেদন করুন এবং ফি পরিশোধ করুন।
- অনলাইনে এস এ খতিয়ানের সার্টিফায়েড কপি ডাউনলোড করুন।
উপসংহার:
ভূমি জরিপ এবং খতিয়ান জমির মালিকানার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না থাকলে আপনি সহজেই প্রতারিত হতে পারেন। তাই, জমি কেনা বা বিক্রির আগে অবশ্যই জমির জরিপ এবং খতিয়ান সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিন।
আশা করি, আজকের ব্লগ পোস্টটি আপনার জন্য তথ্যপূর্ণ ছিল। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন থাকে, তাহলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। ভূমি সংক্রান্ত আরও তথ্য পেতে আমাদের সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ!