June 20, 2025
39-weeks-pregnant-signs-of-labor-featured-image

গর্ভাবস্থার ৩৯ সপ্তাহ: প্রসবের লক্ষণগুলো চিনে নিন

নয় মাস দশ দিন, এই তো আর কয়েকটা দিন! আপনি এখন গর্ভাবস্থার ৩৯ সপ্তাহে। তার মানে আপনার ছোট্ট সোনা পৃথিবীর আলো দেখার জন্য প্রায় প্রস্তুত। এই সময়টা উত্তেজনা, উদ্বেগ আর কিছুটা অস্বস্তির মধ্যে কাটে। কখন বুঝবেন আপনার প্রসব বেদনা শুরু হয়েছে? প্রসবের লক্ষণগুলো কী কী? চলুন, আজকের ব্লগ পোস্টে আমরা এই বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করি।

প্রসবের সাধারণ লক্ষণসমূহ

৩৯ সপ্তাহে беременности মানেই শরীর জুড়ে কিছু পরিবর্তন। সব মায়ের শরীর আলাদা, তাই লক্ষণগুলোও ভিন্ন হতে পারে। তবে কিছু সাধারণ লক্ষণ আছে যা প্রসবের ইঙ্গিত দেয়।

নিয়মিতContractions (জরায়ুর সংকোচন)

প্রসব বেদনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হলো জরায়ুর সংকোচন। এগুলো সাধারণত নিয়মিত এবং সময়ের সাথে সাথে আরও তীব্র হয়।

  • ব্র্যাক্সটন হিক্স কন্ট্রাকশন (Braxton Hicks Contractions): এগুলোকে "ফলস লেবার" বা মিথ্যা প্রসব বেদনাও বলা হয়। এগুলো अनियमित হয় এবং সাধারণত ব্যথা থাকে না।
  • প্রকৃত প্রসব বেদনা: এইContractionsগুলো নিয়মিত হয়, সময়ের সাথে সাথে বাড়তে থাকে এবং ব্যথাসহ হয়। হাঁটাচলা করলে বা অবস্থান পরিবর্তন করলেও এই ব্যথা কমে না।

জরায়ুর মুখ প্রসারিত হওয়া

জরায়ুর মুখ (cervix) ধীরে ধীরে খুলতে শুরু করে, যা প্রসবের জন্য জরুরি। ডাক্তার বা নার্স অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার মাধ্যমে এটি জানতে পারেন।

“শো” অথবা মিউকাস প্লাগ নির্গমন

গর্ভাবস্থায় জরায়ুর মুখে একটি শ্লেষ্মার প্লাগ (mucus plug) তৈরি হয়, যা জরায়ুকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। প্রসবের আগে বা প্রসবের শুরুতে এই প্লাগটি যোনিপথে বেরিয়ে আসতে পারে। এর সাথে সামান্য রক্তও মিশে থাকতে পারে, যাকে "শো" বলা হয়।

জল ভাঙা

এমনিওটিক থলি (amniotic sac) ফেটে গেলে তরল নির্গত হয়। এটা প্রসবের একটা নিশ্চিত লক্ষণ। জল ভাঙার পর দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

৩৯ সপ্তাহে আর কী কী লক্ষণ দেখা যেতে পারে?

প্রসবের সুস্পষ্ট লক্ষণ ছাড়াও আরও কিছু পরিবর্তন আপনি অনুভব করতে পারেন:

  • পেটের নিচের দিকে চাপ অনুভব করা: বাচ্চা নিচে নেমে আসার কারণে তলপেটে চাপ লাগতে পারে।
  • বারবার প্রস্রাবের চাপ: বাচ্চার চাপে মূত্রাশয়ের ওপর চাপ পড়ায় ঘন ঘন প্রস্রাব লাগতে পারে।
  • কোমর ব্যথা: হরমোনের পরিবর্তন এবং বাচ্চার অবস্থানের কারণে কোমর ব্যথা হতে পারে।
  • ডায়রিয়া: প্রসবের আগে হরমোনের পরিবর্তনের কারণে ডায়রিয়া হতে পারে।

কখন ডাক্তার ডাকবেন?

কিছু লক্ষণ দেখা গেলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত:

  • নিয়মিত এবং তীব্রContractions: যদি প্রতি ৫ মিনিটে একবারContractions হয় এবং এক মিনিটের বেশি সময় ধরে থাকে।
  • জল ভাঙা: অ্যামনিওটিক থলি ফেটে গেলে।
  • শিশুর নড়াচড়া কমে গেলে: যদি বাচ্চার নড়াচড়া স্বাভাবিকের চেয়ে কম মনে হয়।
  • যোনিপথে রক্তপাত: অতিরিক্ত রক্তপাত হলে।
  • তীব্র মাথাব্যথা বা ঝাপসা দেখা: এগুলো প্রি-এক্লাম্পসিয়ার লক্ষণ হতে পারে।

প্রসব বেদনা শুরু হলে কী করবেন?

  • शांत থাকুন: গভীর শ্বাস নিন এবং নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করুন।
  • সময়মাপুন: Contractionsগুলোর সময়কাল এবং இடைவெளி नोट করুন।
  • ডাক্তারের পরামর্শ নিন: আপনার ডাক্তার বা নার্সের সাথে যোগাযোগ করে তাদের পরামর্শ অনুযায়ী চলুন।
  • হাসপাতালে যাওয়ার প্রস্তুতি নিন: আপনার ব্যাগ গুছিয়ে রাখুন এবং হাসপাতালে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকুন।

কিছু দরকারি টিপস

এই সময়টাতে নিজের যত্ন নেওয়া খুব জরুরি। কিছু টিপস আপনার জন্য:

  • পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন: শরীরকে রিলাক্স করুন এবং যথেষ্ট ঘুমান।
  • পুষ্টিকর খাবার খান: স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করুন যা আপনাকে শক্তি দেবে।
  • হাইড্রেটেড থাকুন: প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন।
  • হালকা ব্যায়াম করুন: হালকা হাঁটাচলা বা যোগা করতে পারেন।

কিছু সাধারণ প্রশ্ন (FAQs)

৩৯ সপ্তাহে প্রসব নিয়ে কিছু সাধারণ প্রশ্ন থাকে। এখানে কয়েকটি উত্তর দেওয়া হলো:

৩৯ সপ্তাহে প্রসব বেদনা না হলে কী করব?

যদি ৩৯ সপ্তাহেও প্রসব বেদনা শুরু না হয়, তবে চিন্তার কিছু নেই। অনেক মায়ের ক্ষেত্রে ৪০ সপ্তাহ পর্যন্তও অপেক্ষা করতে হয়। তবে, ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিশ্চিত হওয়া ভালো।

প্রথম সন্তানের প্রসব বেদনা কতক্ষণ স্থায়ী হয়?

প্রথম সন্তানের ক্ষেত্রে প্রসব বেদনা সাধারণত ১২-১৪ ঘণ্টা স্থায়ী হতে পারে। তবে এটা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে।

কীভাবে বুঝব এটা ফলস লেবার নাকি রিয়েল লেবার?

ফলস লেবারেContractions अनियमित হয় এবং ব্যথা থাকে না। অন্যদিকে, রিয়েল লেবারেContractions নিয়মিত হয়, সময়ের সাথে সাথে বাড়তে থাকে এবং ব্যথাসহ হয়।

প্রসবের সময় ব্যথাকমানোর উপায় কী কী?

প্রসবের সময় ব্যথাকমানোর অনেক উপায় আছে, যেমন শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম, ম্যাসাজ, এপিসিডিউরাল (epidural) এবং অন্যান্য ব্যথানাশক ওষুধ।

গর্ভাবস্থায় তলপেটে ব্যথা কি স্বাভাবিক?

গর্ভাবস্থায় তলপেটে হালকা ব্যথা স্বাভাবিক, তবে তীব্র ব্যথা বা রক্তপাত হলে দ্রুত ডাক্তার দেখাতে হবে।

শেষ কথা

৩৯ সপ্তাহ беременности একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই সময়টাতে নিজের শরীরের প্রতি খেয়াল রাখুন, প্রসবের লক্ষণগুলো চিনতে চেষ্টা করুন এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলুন। মনে রাখবেন, আপনি একজন শক্তিশালী মা এবং খুব শীঘ্রই আপনার সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখাবেন। শুভ কামনা!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *